বৈষ্ণব পদাবলি বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বের রসভাষ্য নামে খ্যাত এক শ্রেণীর ধর্মসঙ্গীত সংগ্রহ। বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যর সূচনা ঘটে চর্তুদশ শতকে বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস-এর সময়ে, তবে ষোড়শ শতকে এই সাহিত্যের বিকাশ হয়। বৈষ্ণব পদাবলীর প্রধান অবলম্বন রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা। বৈষ্ণব পদাবলী পুস্তকটি সংগ্রহ করেছেন বাবা আউলিয়া মনোহর দাস। বৈষ্ণব পদাবলীতে পাঁচ প্রকারের রস আমরা দেখতে পাই। যথা:- শান্তরস, দাস্যরস, সখ্যরস, বাৎসল্যরস, মধুররস। শান্তরসে কৃষ্ণ ভগবান রূপে পাঠকের কাছে ধরা দেন। এরপর ধীরে ধীরে প্রতিটি রসের মধ্যে দিয়ে ভগবান রূপ পরিত্যাগ করে ধীরে ধীরে মানব রূপে পাঠককুলের কাছে ধরা দিতে থাকেন। মধুর রসে গিয়ে কৃষ্ণ পুরোপুরি মানব রূপে পাঠককুলের সঙ্গে মিশে যান।
বৈষ্ণব কবিতার মুখ্য বিষয় রাধা ও কৃষ্ণের ভালোবাসা এবং তাদের একে অপরকে চাওয়া এবং পাওয়ার এই আকুলতা প্রকাশ করে। কিন্তু তাদের মিলনের মাঝে পাহাড়সম বাঁধা। এই বাঁধা সরাতে চেয়েছেন কবিরা। শ্রীকৃষ্ণ হলেন সৎ-চিৎ-আনন্দের মূর্তিমান বিগ্রহরূপ পরমাত্মা। রাধা তারই প্রকাশাত্মিকা শক্তিরূপ জীবাত্মা। শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী অংশ সঞ্জাত রাধা সৃষ্টি হয়েছেন তারই লীলাসুখানুভবের জন্য। শ্রীরাধা আয়ান বধূ। তাই শ্রীকৃষ্ণের সাথে তার প্রেম অসামাজিক, পরকীয়া। জীবও তেমনই তত্ত্বের দিক থেকে শ্রীকৃষ্ণের স্বকীয় হলেও রূপ-রস-গন্ধযুক্ত জগতের সঙ্গে সে এমনই নিবিড়ভাবে আবদ্ধ যে সে তার স্বকীয়তা ভুলে যায়। সেই ভুল ভাঙলে জীব ভগবানের ডাকে সাড়া দেয়, তখন ঘটে তার অভিসার। জাগতিক ভাবে এটি পরকীয়া ভাবলেও, পারমার্থিক অর্থে এটি ঈশ্বরে বিলীন হওয়ার প্রেমকে বোঝায়। এভাবেই তৈরী হয়েছে বৈষ্ণব পদাবলীর তত্ত্ব। বৈষ্ণব পদাবলিতে পরমাত্মার সাথে জীবাত্মার মিলনই মুখ্য।