বনবিবি হলেন বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত সুন্দরবন অঞ্চলে মৎস্যজীবী, মধু-সংগ্রহকারী ও কাঠুরিয়া জনগোষ্ঠীর দ্বারা পূজিত এক লৌকিক দেবী তথা পিরানি। উক্ত জনগোষ্ঠীর মানুষেরা বাঘের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বনবিবির পূজা করে।বনবিবি বনদেবী, বনদুর্গা, ব্যাঘ্রদেবী বা বণচণ্ডী নামেও পরিচিত। ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের সুন্দরবন অঞ্চলেই মৎস্যজীবী, মধু-সংগ্রহকারী ও কাঠুরিয়া জনগোষ্ঠীর মানুষেরা হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বাঘের হাত থেকে রক্ষা পেতে বনবিবির পূজা করেন। ইতিহাসবিদ সতীশচন্দ্র মিত্রের যশোহর খুলনার ইতিহাস গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী, ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সুন্দরবন এলাকায় দক্ষিণরায়, বণিক ধোনাই ও মোনাই এবং গাজীর অস্তিত্বের কথা জানা যায়। বনবিবি ছিলেন ইব্রাহিম (মতান্তরে বেরাহিম) নামে এক আরবের কন্যা। ইব্রাহিমের স্ত্রী গুলাল বিবি সতীনের প্ররোচনায় সুন্দরবনে পরিত্যক্ত হলে সেখানেই বনবিবির জন্ম হয়।
কথিত আছে, গুলাল বিবি মদিনা এবং ইব্রাহিম মক্কা হতে আগত ছিলেন। দক্ষিণরায় ছিলেন যশোহরের ব্রাহ্মণনগরের রাজা মুকুট রায়ের অধীনস্থ ভাটির দেশের সামন্ত। দক্ষিণরায়ের সঙ্গে বনবিবির একাধিক যুদ্ধ হয়। শেষে দক্ষিণরায় পরাজিত হয়ে সন্ধি করেন। দক্ষিণরায়ের পরাজয়কে এই গ্রন্থে বাঘ বা অপশক্তির পরাজয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে উভয় দেশের সুন্দরবন অঞ্চলের লোকসংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেন বনবিবি। বনবিবির মাহাত্ম্যবিষয়ক কাব্যের নাম “বনবিবির জহুরানামা”। এই কাব্য মঙ্গলকাব্যের শৈলীতে রচিত হলেও এতে আল্লাহ্-রসুল, মক্কা, পির-পিরানি ইত্যাদি প্রসঙ্গ যুক্ত হয়েছে। অরণ্যচারী মানুষের ধর্মবিশ্বাস ও জীবনযাত্রার একটি চিত্র এতে পাওয়া যায়। গবেষকদের মতে, বনবিবি প্রকৃতপক্ষে হিন্দু দেবী বনদুর্গা, বনচণ্ডী, ষষ্ঠী বা বিশালাক্ষী। বাংলায় ইসলামি প্রভাবে তিনি বনবিবিতে পরিণত হয়েছেন।