ধর্মপ্রাণ হিন্দু বাঙালিদের একটা বড়ো আবেগ হলো ‘মন্দির’। মন্দির মানেই সেখানে লেগে থাকে ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়। তেমনই বর্তমান কুমিল্লার এক জগন্নাথ মন্দির প্রায় চারশো বছর ধরে ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে দাঁড়িয়ে আছে। জানা যায়,এক সময় এ মন্দিরটিতে সতেরোটি রত্ন থাকায় এর নাম দেয়া হয় সতেরো রত্ন মন্দির। অনেকের মতে এ মন্দিরটিতে ১৭টি চূড়ার কারণে এর নাম দেয়া হয় সতেরো রত্ন মন্দির। এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি তীর্থ স্থান হিসিবে পরিচিত। প্রায় চারশ’ বছরের প্রাচীন মন্দিরটি দেখতে প্রায় প্রতিদিনই শত শত লোকের সমাগম ঘটে সেখানে। বর্তমানে মন্দিরটি সংরক্ষণ করছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
মন্দির কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা যায়, ১৬৮৫-১৭১২ খৃষ্টাব্দে সতেরো রত্ন মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে এর নির্মান কাজ শুরু করেন ত্রিপুরার মহারাজ দ্বিতীয় রত্নমাণিক্য। এই মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত আছে বহু ভাঙ্গা গড়ার ইতিহাস। তবুও মন্দির দাঁড়িয়ে আছে অবিচলভাবে।
ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত এই মন্দিরটি বাংলার টেরাকোটা স্থাপত্যের নিদর্শন বহন করে। অষ্টকোণ আকৃতির স্থাপত্য পরিকল্পনার এই মন্দিরটি সতেরো চূড়া বিশিষ্ট হলেও বর্তমানে অধিকাংশ চূড়াই ধ্বংস হয়ে গেছে। মন্দিরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ৮টি করে ১৬টিসহ চূড়ার সংখ্যা ১৭টি ছিল। মন্দিরটির ব্যাস ৫২.০৫ মিটার। বাইরের দিক থেকে তিনতলা মনে হলেও মন্দিরটির ভিতরের দিক থেকে পাঁচ তলা পর্যন্ত ওঠা যায়। মন্দির এলাকা ছায়াঘেরা নিরিবিলি পরিবেশ। গাছে গাছে পাখির কলধ্বনি । প্রাচীন মন্দিরটির পাশে বর্তমানে নির্মান করা হয়েছে আরেকটি মন্দির। রয়েছে তুলসীতলা প্রার্থনা বেদী, যজ্ঞ মন্দির, নাট মন্দির। এখানে রয়েছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) কুমিল্লা শাখা কার্যালয়। এরা ১৯৯৭ সাল থেকে এই মন্দিরটি পরিচালনা করে আসছে।