খড়দা অথবা খড়দহ কলকাতার উপকণ্ঠে আরও একটি প্রাচীন জনপদ । মূলত শ্রীনিত্যানন্দের অনুসঙ্গ ধরেই এই এলাকায় বৈষ্ণব আন্দোলনের একটি মূল কেন্দ্র হিসাবে প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে। শ্রীনিত্যানন্দ ইহলীলা সংবরণ করার পর তাঁর এক স্ত্রী জাহ্নবাদেবী ও পুত্র বীরভদ্রেকে এই আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যায়। খড়দার এই জায়গায় রামহরি বিশ্বাস প্রথমে ১২টি আটচালা শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮০৩ সালে রামহরি বিশ্বাস মারা যাওয়ার পর তাঁর দুই পুত্র প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাস ও জগমোহন বিশ্বাস সম্পত্তির উত্তরাধিকা হন এবং সেই সম্পদ আরও বাড়িয়ে তোলেন। রামহরি বিশ্বাসের অপর পুত্র প্রাণকৃষ্ণ কুচবিহার ও সিলেটে দেওয়ানের কাজ করতেন । তাঁর আবার তন্ত্র চর্চার অভ্যাস ছিল। তিনি রামহরি বিশ্বাসের তৈরি দ্বাদশ শিবমন্দিরের পরে আরও ১৪টি আটচালার শিব মন্দির তৈরী করেন। সেই নিয়ে এই কমপ্লেক্সে মোট ২৬টি মন্দির স্থাপিত হয়।
শ্রীক্ষেত্র পুরীর মতো একটি ‘রত্নবেদী’ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন প্রাণকৃষ্ণ। সেই জন্য তিনি আশি হাজার শালগ্রাম শিলা ও কুড়ি হাজার বাণলিঙ্গ সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু ১৮৩৫ তাঁর সালে অকাল প্রয়াণের পর সেই প্রক্রিয়া অসম্পূর্ন থেকে যায়। প্রাণকৃষ্ণ সম্পর্কে আরও একটা খবর পাওয়া যায়। জগমোহনের মৃত্যুর পর প্রাণকৃষ্ণ তাঁর নাবালক পুত্রকে সম্পত্তির ভাগ দিতে অস্বীকার করেন এবং সেই বিবাদ সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। আদালতের বিচারে অবশ্য প্রানকৃষ্ণকে অর্ধেক সম্পত্তি তুলে দিতে হয় ভাইপোর হাতে। আদালতের নির্দেশেই সেই ২৬ শিব মন্দিরে এখনও নিত্য পুজোর ব্যবস্থা আছে।
