খবরে আমরাঃ কলকাতা শহর তো বটেই, গ্রাম বাংলাতেও এখন ইতিউতি দেখা মেলে ফিজিও থেরাপিস্টের। সকালে খবরের কাগজ খুললে বা টিভির বিজ্ঞাপনেও রয়েছেন তাঁরা। এক ফোনেই বাড়িতে এসে ফিজিও থেরাপি করে রোগীদের চিকিৎসা করছেন তাঁরা।
আপনি অজান্তেই জাল ফিজিওথেরাপিস্টের ফাঁদে পড়ছেন না তো। কারণ, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের হিসাবে নথিভুক্ত ফিজিওথেরাপিস্টের সংখ্যা মাত্র পাঁচ হাজার দুশো সাতাশ। কিন্তু কাউন্সিলের মতে, তাঁদের নজরে যে তথ্য এসেছে তাতে কমপক্ষে লক্ষাধিক ব্যক্তি চেম্বার খুলে ফিজিওথেরাপির চিকিৎসা করছেন। সিংহভাগই যে ভুয়ো। তাই নকল ফিজিওথেরাপিস্টদের ঠেকাতে এবারওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের ধাঁচে ফিজিওথেরাপিস্ট কাউন্সিল গঠনের দাবি তুললেন খোদ আসল ফিজিওথেরাপিস্টরা। এই মুহূর্তে বাংলায় ইন্ডিয়ান ফিজিওথেরাপিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা পাঁচ হাজারের সামান্য বেশি। এঁরা সকলেই ইউজিসি স্বীকৃত কলেজ থেকে ব্যাচেলর ইন ফিজিওথেরাপি ডিগ্রি লাভ করেছেন। অভিযোগ, এর বাইরেও প্রায় অসংখ্য লোক পাড়ায় পাড়ায় ফিজিওথেরাপি করছেন। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে চেম্বার। ইন্ডিয়ান ফিজিওথেরাপিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদক অরিন্দম শেঠের কথায়, এঁদের না আছে যোগ্যতা না আছে ফিজিওথেরাপির কোনও সার্টিফিকেট। ভুলভাল ব্যায়াম শিখিয়ে রোগীকে সুস্থ করার জায়গায় আরও অসুস্থ করে দিচ্ছেন। ইন্ডিয়ান ফিজিওথেরাপিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইপিএ) বঙ্গীয় শাখার সভাপতি কৌশিক দে জানিয়েছেন, ব্যথানাশক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক। হাতে, কোমরে চোট আঘাত সারাতে তাই আমজনতা দৌড়ন ফিজিওথেরাপিস্টদের কাছে। কিন্তু ভুয়ো ফিজিওথেরাপিস্টদের বাড়বাড়ন্তে উপশম তো দূর, অনেক সময়ই রোগীর শরীরের হাল বেহাল হয়ে পড়ছে। কোনও কাউন্সিল না থাকায় অভিযোগও জানানো যাচ্ছে না ভুয়ো ফিজিওথেরাপিস্টদের বিরুদ্ধে।
আইপিএ সদস্যদের দাবি, ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের ধাঁচে ফিজিওথেরাপিস্ট কাউন্সিল তৈরি হলে সহজেই ধরা যাবে ভুয়ো ফিজিওথেরাপিস্টদের। কীভাবে? আইপিএ-এর প্রাক্তন সম্পাদক অরূপকান্তি সাহার কথায়, কাউন্সিল চালু হলে যাঁরা ব্যাচেলর ডিগ্রি পাস করেছেন, তাঁদের একটি নির্দিষ্ট নম্বর দেওয়া হবে। চিকিৎসকদের মতো ফিজিওথেরাপিস্টদের প্রেসক্রিপশনে সেই নম্বর থাকতে হবে। তা দেখলেই বোঝা যাবে কে সত্যিকারের ফিজিওথেরাপি ডিগ্রি পেয়েছেন।
২০২১ সালের ২৪ মার্চ লোকসভায় পাস হয়েছে ন্যাশনাল কমিশন ফর অ্যালায়েড অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রফেশনাল অ্যাক্ট। বাংলায় ফিজিওথেরাপিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্রে লাগু হয়েছে এই আইন। চালু হয়েছে কাউন্সিলও। বঙ্গে অবিলম্বে ওই আইন লাগু করতে হবে। নতুন আইন অনুযায়ী স্বাধীনভাবে চিকিৎসা করতে পারবেন ফিজিওথেরাপিস্টরা। অরিন্দম শেঠের কথায়, শরীরবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে তবেই মেলে ফিজিওথেরাপির ডিগ্রি। স্বাধীনভাবে তাঁর চেম্বার করার অধিকার রয়েছে ওই আইনে।